Tuesday, March 21, 2017

উইনন্ডোজের অপকারীতা / কেন উইনন্ডোজ ব্যবহার করবো না


শিরোনাম পড়ে অদ্ভুত লাগতেই পারে, অথবা ভাবতে পারেন, ব্যাটা বলে কি, আরেকটু উঁচু স্তরে গিয়ে দার্শনিকের মত মাথা ঝুঁকিয়ে বলতে পারেন "মাথা খারাপ!", এসব না হলে, অন্তত আপনার মনে এ প্রশ্নটা আসা উচিৎ, "যে উইনন্ডোজের (মাইক্রোসফট) বিল গেটস পৃথিবীর এক নাম্বার ধনকুবের, তার আবার অপকারীতা কি হতে পারে? ছোটদের গেমসে আসক্তি বোধয়!!
এসব ভাবতেই পারেন, কিন্তু এখানে এসব লিখতে বসি নি, বলতে চাচ্ছি অন্য কথা।
আমরা বাংলাদেশ বা ভারতে যারা বাস করি, দু'টি উন্নয়নশীল দেশ। উন্নত নয়। তবে ১০-১৫ বছরের মধ্যে সে তালিকায় ঢুকে যাবো। এখন প্রযুক্তির যুগ, মানুষ এর কাঁধে ভর করেই এগিয়ে যাবে, তাই প্রযুক্তি ছাড়া আধুনিক জীবন কল্পনা করা যায় না, আর কল্পনা করা গেলেও বাস্তবে সম্ভব নয়। আর এর প্রধান হাতিয়ার হল "কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট", কম্পিউটারের কথা এলেই এসে যায় অপারেটিং সিস্টেমের কথা। কম্পিউটারের আদিযুগে ছিল "ইউনিক্স অপারেটিং সিস্টেম " (এখনো আছে), তারপর আরো বিভিন্ন অপারেটিংসিস্টেম তৈরী হয়েছিল, কিছু টিকে আছে, কিছু নেই, এদের মধ্যে বর্তমানে বহুল প্রচলিত হল "উইন্ডোজ, ম্যাকিন্টোস আর গনু/লিনাক্স (GNU/Linux)
এসব কাজ করে এখন যদিও ভালো লাগে,মনে মনে ভাবি শালার গবেটরা কিছুই জানে না! নিজেদের চালাক ভাবি সেটা কি ভুল ভাবা নয়?
তাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে যদি ফ্রিতেই চালানো যেত, আপনিই বলুন, বিল গেটস কি বিশ্বের এক নম্বর ধনী হতে পারতেন?
আসলে আমরা যে এভাবে উইন্ডোজ চালাচ্ছি, এটাও ওদের ব্যবসার অংশ, কিভাবে?
আব্বুর কাছে একটা গল্প শুনেছিলাম, পাকিস্তান আমলে নাকি ডেকে ডেকে চা খাওয়াতো আর খাওয়া শেষে হাতে কয়েক প্যাকেট ধরিয়ে দিত, বাড়িতে নিয়ে খাওয়ার জন্য...এর ফল তো এখন মোড়ে মোড়ে দেখা যায়, নয় কি?
আসল কথা হচ্ছে অভ্যাস, মাইক্রোসফ্টের কুটিল চক্রান্ত এটা, বিনামূল্যে ব্যবহার করছি (চুরি করে), আর এটাই শিখছি, স্কুল-কলেজ কিংবা কম্পিউটার সেন্টারে কম্পিউটার শেখা বলতে মূলত উইনন্ডোজের ব্যবহারই শেখানো হয়।
যখন আমাদের দেশ ধনী দেশের তালিকায় যাবে, মাইক্রোসফট চাইবেনা আমরা ফ্রি তে ব্যবহার করি, তখন? সারা দেশের কম্পিউটার ব্যবস্থা অচল হয়ে পরবে, নিরুপায় হয়ে হাজার হাজার টাকা খরচ করে ওসব কিনতে হবে, আর দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা চলে যাবে বিদেশিদের পকেটে।
বাংলাদেশের প্রায় ৯৯ শতাংশ কম্পিউটার ব্যবহারকারীই উইন্ডোজ অপারেটিংসিস্টেম ব্যবহার করেন আর সরকারী/বেসরকারি অফিস, স্কুল,কলেজ, হাসপাতাল, কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও এটি বহুল ব্যবহৃত, তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, অধিকাংশই বিনামূল্যে ব্যবহার করেন।
সাধারণ ব্যবহারকারীগন জানেনই না যে উইন্ডোজ টাকা দিয়ে কিনতে হয়! সাথে সফ্টয়্যারও কিনতে হয়। যেমন মাইক্রোসফট অফিস(word, excel, PowerPoint) ,, অ্যাডোবি ফটোসপ(Adobe PS),এডোবি ইলাস্ট্রেটর, পিসপাইস(Orcad Pspice )..... প্রয়োজনীয় যেগুলি, বিনামূল্যে নয়।
আমরা তো ৫০ টাকার সিডি দিয়েই হাজার হাজার টাকার সফ্টয়্যার ইন্সটল করে ফেলি। গেমস এর ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার।
দ্বিতীয়ত, আজকের তারুণ্য, আগামী দিনের নেতৃত্ব, তারুণ্য মানে সজীবতা, উন্মাদনা নয়।
দেশের হাল শক্ত হাতে ধরতে চাই বলিষ্ঠ মানসিকতা আর যোগ্যতা, জ্ঞান এবং আত্মপ্রত্যয়, তাই আজকের তরুণদেরই এগিয়ে আসতে হবে দেশের উন্নয়নে। উইন্ডোজ বর্জনের মাধ্যমে দেশের ভবিষ্যতের টাকা সঞ্চয়ের এক শুভ সূচনা করা যেতেই পারে।

তৃতীয়ত নিরাপত্তার ব্যাপার, উইন্ডোজ নিজেদের বহুমুখী ব্যবসা ধরে রাখার জন্য অনেকটা ইচ্ছাকৃত ভাবেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা দূর্বল করে রাখে, এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে গড়ে উঠেছে রমরমা অ্যান্টিভাইরাসের ব্যবসা। আর এটা বন্ধ হবার কোন সম্ভাবনা অদূর ভবিষ্যতেও নেই। কেননা উইন্ডোজের সোর্সকোড উন্মুক্ত নয়।
কেউ ভাবতে পারেন "আমি আর এমুন কি যে আমার পিসি হ্যাক হবে? ", আপনি কি সেটা বড় কথা নয়, কথা হচ্ছে কেন আপনি কাউকে এমন সুযোগ দেবেন?
চতুর্থ বিষয় হল জ্ঞান চর্চা, কম্পিউটার একটা যন্ত্র, নিছক যন্ত্র, আর আপনি মানুষ, কেন যন্ত্র দ্বারা পরিচালিত হবেন?
উইনন্ডোজ সফ্টয়্যার ডেভেলপারগণ এমন কিছু সফ্টয়্যার বানিয়েছে আর বানাচ্ছে যেগুলি আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে, কোরতানা, এর উদাহরণ। আর যেহেতু আপনি সোর্সকোড দেখার সুযোগ পান না, তাই এটাও জানেন না যে প্রগ্রামগুলি কিভাবে কাজ করে, তাই বলা যায় উইনন্ডোজ ব্যবহার করা মানে তৃতীয় কারো কাছে নিজের র্কতৃত্ত ছেড়ে দেওয়া, কেন এমনটা হতে দেবেন?
এত কথা শোনার পর নিশ্চই প্রশ্ন করবেন, "তবে বিকল্প কি? "

★উইনন্ডোজের বিকল্প হবে এমন একটি অপারেটিং সিস্টেম যেটা বিনামূল্যে পাওয়া যায়, সোর্সকোড উন্মুক্ত, নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী এবং স্বকীয়।
আপনার উচিৎ নেটে এ নিয়ে কিছুটা ঘাঁটাঘাঁটি করা, তবে সে সময় যদি আপনার না থাকে, তবে বলে দিচ্ছি, GNU/Linux এর সকল ডিস্ট্রো।
তবে আপনি যদি উইন্ডোজ ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন, আপনার জন্য কয়েকটি ডিস্ট্রোর নাম দিচ্ছি,
১। লিনাক্স মিন্ট (Linux Mint)
২। যুবুন্টু অথবা কুবন্টুু (xubuntu or kununtu)
৩। মানজারো (Manjaro)
৪। দেবীয়ান (Debian)
আর যদি আপনি হ্যাকার হোন তবে,
৫। কালি লিনাক্স (Kali Linux)
সবার জন্য শুভকামনা রইল।



আরো দেখুন,

কেন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের ফ্রী-সফ্টয়্যার ব্যবহার করা উচিৎ ?--(রিচার্ড স্টলম্যান)

22 comments:

  1. But windows software er moto to linux er software nai...

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনি ঠিকই বলেছেন,তবে আমাদের প্রয়োজনীয় প্রায় সকল টুলস ই গনু/লিনাক্স এ রয়েছে।

      Delete
  2. চমৎকার লিখেছেন। অভিভুত।

    ReplyDelete
    Replies
    1. শুনে ভাল লাগল, পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

      Delete
    2. আমি একেবারেই নতুন এই ব্যাপারে। তবে এর গুরুত্ব আপনার লিখনি থেকে বুঝাতে পারলাম। আমাকে কি ডিটেইলস জানানো যাবে? কিভাবে আমি শুরু করতে পারি...
      আমার ইমেইল tonmoy23bd@gmail.com

      Delete
    3. লিনাক্স নির্ভর যে কোন অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার শুরু করে দেখতে পারেন। তারপর নিজেই কিছু কিছু বিষয় বুঝতে পারবেন। আর ঠিক কোন বিষয়টি বিস্তারিত জানতে চাইছেন তা বললে হয়তো আমিও কিছুটা চেষ্টা করতে পারি আপনাকে তা জানানোর।

      Delete
  3. সব বুন্টু আছে কিন্তু মাদার বুন্টু উবুন্টু নেই কেন? খেলব না।

    ReplyDelete
  4. হাঃ হাঃ... kde interface + ubuntu = kubuntu & xface interface + ubuntu = Xubuntu

    ReplyDelete
    Replies
    1. মায়ের চেয়ে মেয়েগুলি দেখতেও ভালো

      Delete
  5. ভাল লাগল......
    কিন্তু একটা সমস্যা বেসিক ধারণা পাব কোথায়? সফটোয়্যার ইন্সটল/আনইন্সটল, মডেম দিয়ে নেট ইত্যাদি।
    ধন্যবাদ...

    ReplyDelete
  6. অ্যান্ড্রয়েডের মতই install / uninstall প্রক্রিয়া, সফ্টয়্যার ম্যানেজার রয়েছে। প্লে-স্টোরের মত, আপনি যদি ব্রডব্যান্ড কানেবশনে না থাকেন তাহলে গনু/লিনাক্স ইন্সটল না করাই ভাল। সবচেয়ে ভাল হয় , এটা নিয়ে একটু গুগলে ঘাঁটাঘাঁটি করা।

    ReplyDelete
  7. প্রয়োজনীয় softwares and Driver গনু/লিনাক্সে বিল্ডইন দেওয়া থাকে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমার ল্যাপটপে লিনাক্স মিন্ট ইনস্টল করলে টাচপ্যাড, মডেম কাজ করে না...। কি করতে পারি ?? যদি একটু সাহায্য করতেন...
      ধন্যবাদ

      Delete
    2. মডেমের ব্যাপারে আসলে কিছু বলতে পারছি না এমুহূর্তে। টাচপ্যাড এর ক্ষেত্রে আপনাকে BIOS (Basic Input Output System) এ গিয়ে ঠিক করতে হবে; আমার ল্যাপটপে অন হবার সময় f8 চাপলে ওই মেন্যু আসে। সেখানে গেলে touchpad /keyboard এই টাইপের অপশন দেখতে পাবেন, ওটা advance থেকে basic করে দেবেন, আশা করি সমাধান হবে।

      Delete
    3. আমার ল্যাপটপে esc তে চাপলে আসে। আর আমি BIOS এ এমন কোন অপশন পাই নাই...
      ধন্যবাদ

      Delete
    4. restaart din, on hobar somoy F2 chapun. Menu asbe.

      Delete
    5. ha.. Amar oikhane touchpad er option tay enable kora ase..

      Delete
    6. তার নিচে আর একটা অপশন পাবেন, সেখানে "Advance" মুডটি বাদ নিয়ে অন্য যেটি রয়েছে সেটা সিলেক্ট করুন। ঠিক হয়ে যাবে। এটা আসলে উইনন্ডোজের আর একটি কুচক্রান্ত। আমার ল্যাপটপে (আসুস) ইনপুট সাউন্ড আর ব্লুটুথ কাজ করে না। আমার এক ফ্রেন্ডের ল্যাপটপে(এসার) আপনারটির মত সমস্যা হচ্ছিল, এভাবে ঠিক করেছিলাম।

      Delete
  8. লিনাক্স নিয়ে সবাই অনেকটা ভয় পায়। আমি ই তো এক সময় পেতাম। পরে দেখি অনেক ইজি একটা ব্যাপার। পরে অনেক টা অপ্রচলিত (আমাদের দেশে) স্লাকওয়ার বেস পাপ্পি লিনাক্স ব্যাবহার করছি।

    ReplyDelete
    Replies
    1. শুনেছি পাপ্পি লিনাক্স টা বেশ মজার। কিন্তু আমি নতুন, তাই ওবুন্টু দিয়ে শুরু করেছিলাম, এখন লিনাক্স মিন্ট ব্যবহার করি।

      Delete
    2. খালি একটা ডিস্ট্রো যদি ঠিকঠাক মতো চলত।। আমার আর কিচ্ছু চাওয়ার নাই...

      Delete
  9. একটা ব্যাপার, আমার অটোক্যাড দরকার হয় অনেক বেশি। এই সফটওয়্যার এর ব্যবহার কি উবুন্টু বা লিনাক্স মিন্ট এ পাব?

    ReplyDelete

Simple Screen Recorder এবং ফেসবুকে স্ক্রিন শেয়ারিং এর Black Screen সমস্যার সমাধান

 লিনাক্স নির্ভর অপারেটিং সিস্টেমে GNOME Interface ব্যবহারকারীদের কেউ কেউ ফেসবুকের ভিডিও কলে স্ক্রিন শেয়ারিং অপশনে কিংবা সিম্পল স্ক্রিন রেকর্...