মুক্ত(Free) সফ্টওয়্যার চিন্তাধারার জনক রিচার্ড স্টলম্যানের বক্তব্য অনুবাদ, বক্তব্যের সময়কাল ২০০৮ সাল।
আর একটি কথা বলে রাখা প্রয়োজন, তা হল "ফ্রি" বলতে মুক্ত/উন্মুক্ত/ব্যবহারের_জন্য_স্বাধীন এমন বোঝানো হয়েছে, টাকা-পয়সা নয়।
Link: মূল বক্তব্য (English)
____________________________________
আমি রিচার্ড স্টলম্যান। আজ থেকে প্রায় ২৫ বছর আগে ফ্রি সফটওয়্যার এর পটভূমি গড়ে তুলি। ফ্রি সফটওয়্যার হল সেই সফটওয়্যার যা ব্যবহারকারীর স্বাধীনতা এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। নন-ফ্রি সফটওয়্যার হল মালিকানা ভুক্ত; যা ব্যবহারকারীকে স্বাধীন ভাবে তা ব্যবহার করার সুযোগ দেয় না, এক্ষেত্রে ব্যবহারকারী বিচ্ছিন্ন এবং অসহায়।
তারা বিচ্ছিন্ন কারণ সফ্টওয়্যার প্রস্তুতকারক তাদের ওটা বিতরণ করার ক্ষমতা দেয় না, আর তারা অসহায় কারণ তারা সোর্স কোড দেখার সুযোগ পায় না। এজন্য তারা তা পরিবর্তনও করতে পারে না, আর কখনও জানতেও পারেনা প্রোগ্রামটি আসলে কি করছে। এটা খুবই বাজে ব্যাপার।
ফ্রি-সফ্টওয়্যার বলতে বোঝায় এটা এমন সফ্টওয়্যার যা ব্যবহারকারীদের চার রকমের স্বাধীনতা(Freedom) দেয়:
Freedom 0 হল সেই স্বাধীনতা যা ব্যবহারকারীকে সব ক্ষেত্রেই প্রোগ্রামটি চালানোর সুযোগ দেয়।
Freedom 1 হল সেই স্বাধীনতা যা ব্যবহারকারীকে এর সোর্স কোড দেখতে দেয় আর সুযোগ দেয় ইচ্ছেমত পরিবর্তন করার।
Freedom 2 হল প্রতিবেশী কে সাহায্য করা; এর মানে হল তুমি সোর্স কোড পরিবর্তন করে যা বানিয়েছ ওটা বিতরণ করার ক্ষমতা।
Freedom 3 হল নিজস্ব সংঘ গড়ে তোলার ক্ষমতা, যেখানে তুমি তোমার পরিবর্তন করা প্রোগ্রামের অনুলিপি বিতরণ করতে পার।
এই চার ধরণের স্বাধীনতা সম্বলিত ফ্রি সফ্টওয়্যার এর ব্যবহারকারীর প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সেগুলি বিতরণ করার সামাজিক বৈধতা দেয়।
তারপর, স্কুলগুলোর উচিৎ শুধুমাত্র শ্রী সফ্টওয়্যার এর উপর শিক্ষা দেওয়া। এরও চারটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে।
সবচেয়ে প্রাথমিক কারণ হল টাকা বাঁচানো। স্কুল ফান্ডের যথেষ্ট টাকা থাকে না তাই অহেতুক মালিকানা ভুক্ত সফ্টওয়্যার কিনে টাকা নষ্ট করার কোন মানে হয় না। আর একটি ব্যপার হল, কিছু মালিকানাভুক্ত সফ্টওয়্যার প্রতিষ্ঠান স্কুলগুলোকে তাদের নন শ্রী সফ্টওয়্যার গুলো বিনামূল্যে অথবা খুব কম টাকার বিনিময়ে ব্যবহার করতে দেয়।
এর কারণ তারা ছাত্র-ছাত্রীদের ওই সফ্টওয়্যার গুলোতে আসক্ত করাতে চায়। খুবই ক্ষতিকর চক্রান্ত এটা। তাদের চক্রান্ত অনুযায়ী ছাত্র-ছাত্রীরা ওই সফ্টওয়্যার গুলোর প্রতি স্থায়ী ভাবে আসক্ত হয়ে পড়ে।
যদি কোন স্কুলে মালিকানাভুক্ত নন ফ্রি সফ্টওয়্যার ব্যবহার করা শেখানো হয় তাহলে ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের গ্র্যাজুয়েশন শেষ করতে করতে এগুলির প্রতি নির্ভরশীল হয়ে যাবে। আর গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পর এগুলি টাকা দিয়ে কিনে ব্যবহার করতে হবে। তারা নিশ্চয়ই কোন প্রতিষ্ঠানের হয়ে চাকরি করবে, সেখানে নিশ্চই ঐ কোম্পানী গুলো তাদের নন ফ্রি সফ্টওয়্যার ফ্রিতে ব্যবহার করতে দেবে না।
তারপর, মালিকানাভুক্ত সফ্টওয়্যার প্রস্তুতকারকেরা আসলে স্কুলের মাধ্যমে পুরো সমাজটাকেই জিম্মি করে ফেলে। তাই স্কুলগুলোর অবশ্য কর্তব্য হল তাদের এই ক্ষতিকর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কোন রকম সহযোগীতা না করা। কারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য হচ্ছে পরবর্তী প্রজন্মকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা, যারা হবে সৃজনশীল, স্বাধীন এবং স্বেচ্ছাসেবক। মুক্ত সফ্টওয়্যার ব্যবহারে উপযুক্ত শিক্ষা দেবার মাধ্যমেই এটা করা সম্ভব। স্কুলগুলোর কর্তব্য হল ওইসব নন ফ্রি সফ্টওয়্যার বর্জন করে ফ্রি সফ্টওয়্যার ইনস্টল করা।
এর চেয়ে আরো গুরুত্বপূর্ণ কারণ : ভাল প্রোগ্রামার হওয়া, প্রোগ্রামিং এ দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজন প্রচুর প্রোগ্রাম কোড পড়া এবং লেখা। ভাল ভাবে বড় প্রোগ্রাম লেখার জন্য দরকার ভাল ভাবে বড় প্রোগ্রামের ছোট অংশ লেখা। শুধুমাত্র ফ্রি সফটওয়্যারেই এটা করা সম্ভব। শুধুমাত্র ফ্রি সফ্টওয়্যারই এর সোর্সকোড পড়ার সুযোগ দেয়।
এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ কারণ : সুনাগরিকতার শিক্ষা দেওয়া, স্কুলের লক্ষ্য শুধুমাত্র কারিগরি দক্ষতা অর্জন করানোতে সীমাবদ্ধ নয়, আরো মহান কিছু, এটা হল সহযোগিতার মনোভাব এবং অভ্যাস গড়ে তোলা।
আর ক্লাসের এই নিয়মটা থাকা উচিৎ, তা হল , কেউ কোন প্রোগ্রাম লিখলে তা সবার মাঝেই বিতরণ নিশ্চিত করা আর এটা প্রচার করা, ক্লাসে শুধু মাত্র ফ্রি সফ্টওয়্যার দেখাতে পারবে।
সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরই করণীয় হল ফ্রি সফ্টওয়্যার ব্যবহারে বিশেষ ভাবে গুরুত্বারোপ করে সমাজকে আরো এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া।
ধন্যবাদ।
আরো দেখুন,
No comments:
Post a Comment